গত 10ই নভেম্বর 2006 আমরা ক'জন ডি-এক্সার দৈনন্দিন রুটিন কাজ ফেলে বেড়িয়ে পড়েছিলাম এক রোমাঞ্চকর ভ্রমনে।
আজিজুল আলাম আল আমিন (সুনাম) এর প্রস্তাবে একমত হয়ে আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম, চাঁপাই নবাবগঞ্জের জনাব আব্দুস সামাদ মাস্টার ও নাচোলের আব্দুল মান্নান মাস্টারের বাসভবনে।
আমাদের এ ডিএক্স টুরের উদ্দেশ্য ছিল এই দুই বিখ্যাত বেতার শ্রোতাদের সানি্নধ্য লাভ করা ও সেখানে ডি-এক্স এক্সপিডিসন পরিচালনা করা।
সকাল 7টায় এস.এম,জে. হাবীব, নুরুজ্জামান সেন্টু, আজিজুল আলাম আল আমীন ও আমি আশিক ইকবাল টোকন, রাজশাহীর কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির কোলে হারানোর উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে বসি।সকালের নাস্তা করতে যখন চাপাই নবাবগঞ্জের এক হোটেলে ঢুকি (বিশ্বাস করুন জীবনে আর কখনও সেখানে ঢুকবো না) তখন আমাদের হাবীব ভাই আগ-বাড়িয়ে অটো রিজার্ভ করা শুরু করেন। যা হবার তাই একটা প্রচন্ড রকম ধাক্কা খেলেন তিনি আমার কাছে। অবশ্য নাস্তা শেষ করে সেই বাহনই আমাদের পৌচ্ছে দিলো ধাইনগরে একদম সামাদ মামার (আমি তাকে মামা বলেই ডাকি) কাছে। তিনি রাস্তার ধারে আমাদের জন্যই অপেক্ষাতে ছিলেন।
মেঘলা আকাশ, গ্রামীন পরিবেশে একদম জমিদার বাড়ির মত সুবিশাল বাড়িতে আমরা মূহুর্তে মেতে উঠি ডি-এক্স আলোচনায়। কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসে চাপাই নবাবগঞ্জের ঐতিহ্য কালাই র ুটি। আমরা সবাই হামলে পড়ি ঐতিহ্যের স্বাদ আস্বাদনে।
এবার এলাকা দেখার পালা। সামাদ মামা আমাদের ঘুরে দেখাতে লাগলেন তাদের এলাকা, পরিচিত হতে থাকলাম নানা জনের সাথে। এরই মাঝে আমরা সদলবলে জুম্মার নামাজ পড়লাম মামার শশুর বাড়ির কাছের মসজিদে।
দুপুরে খাবার পর পরই মান্নান মাস্টারের ফোন কখন রওনা হচ্ছি। আকাশ ফেটে বৃস্টি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। এরই মধ্যে রওনা হওয়ার কথা ঘোষনা করতেই মামা হাজির করলেন ফল-মুলের বিশাল সমাহার নিয়ে।
শুরু হলো আমাদের অভিযানের দ্্বিতীয় পযর্ায়। সামাদ মামার ওখান নদী পর্যন্ত মামা আমাদের সঙ্গ দিলেন। কর্দমাক্ত রাস্তা, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। আমার ও সেন্টুর মাথায় তোয়ালে, আমরা এগিয়ে চলেছি গ্রামের ইট বিছানো রাস্তা ধরে।এরই মধ্যে খুলনা থেকে শ্রোতা বন্ধু বিকাস রঞ্জন ঘোস মোবাইল কনফারেনস এর মাধ্যমে আমাদের কাছে হাজির করলেন কুড়িগ্রামের আঃ কুদ্দুস মাষ্টার, খুলনার আরসাদ আলী বিশ্বাস সহ কয়েকজনকে। রাস্তাতে পা টিপে টিপে হাঁটছি আর মোবাইলে আমাদের প্রতিটা ধাপের ধারাবিবরনি দিচ্ছি - এ এক মজার অভিজ্ঞতা।
নৌকাতে নদী পার হতেই বৃষ্টি হানা দিল প্রচন্ড বেগে। একটা ছোট্ট চা-এর দোকানে অপেক্ষা আর সেখান থেকেই একটি লচিমন (স্যালো চালিত ভ্যান) ভাড়া করে রওনা হলাম নাচোল। মান্নান মাস্টার এরই মধ্যে বার কয়েক রিং করে ফেলেছে।
অবশেষে নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে পৌাচ্ছালাম মান্নান মাস্টারের বাড়ি। অন্ধকার রাত..পলি্ল বিদ্যুত প্রথামত বেড়াতে গিয়েছেন..আমরা হাটছি।
মান্নান মাস্টারের বাড়িতে আমরা পৌাচ্ছানোর সাথে সাথে মেতে উঠলাম রেডিও স্টেশন চেক করতে। বলা বাহুল্য এখানে আমরা বি িচ্ছন্ন হয়ে পড়ি মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে। ভরসা একমাত্র মান্নান মাস্টারের এন্টিনা লাগানো মোবাইল সেটটি।
রাত্রে ভরপেট খেয়ে যখন তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি মোইল কনফারেনস এ আমরা বাংলাদেশের নানা প্রান্তের সাথে আবার যুক্ত হলাম। বাড়তি পাওনা জামর্াণ বেতারের নুরুন্নাহার সাত্তার আপা। আমরা তুলে ধরলাম আমাদের এক্সপিডিশনের প্রতিটা মুহুর্ত-- আর তারা উপভোগ করলেন আমাদের মতই।
রাত 3 টের দিকে নিদ্রা দেবী আমাদের সঙ্গ দিলেন। আমরা শান্ত হলাম। রাত্রের প্রচন্ড বৃষ্টি, বিদ্যুতহীনতা আমদের আরও রোমাঞ্চিত করলো।
এবার ফেরার পালা। পরের দিন সকাল 8টাতে বৃস্টি মাথায় নিয়ে আমরা 4 জন রওনা হলাম বাড়ির দিকে। বুকের ভেতর কিছু হারানোর কস্ট ও অনেক পাওয়ার সুর মুচ্ছনা তুলছে নতুন এক রাগ।
আমরা রওনা হলাম আবার আমাদের সেই চীর চেনা-ব্যাস্ত শহুরে জীবনের দিকে।
Comments